ঝামেলায় পড়ে গেলাম

ঝামেলায় পড়ে গেলাম

বড় ভাইয়ার জন্য পাত্রী দেখতে গিয়ে বড্ড ঝামেলায় পড়ে গেলাম।
মেয়ে নাকি ভাইয়াকে পছন্দ না করে আমাকেই পছন্দ করে ফেলেছে।
ব্যাপারটা সবার কাছে খারাপ মনে হলেও আমি কিন্তু বেজায় খুশি।
একপ্রকার খুশিতে আত্মহারা বলা চলে।


মেয়েটা যখন আমাদের সামনে এসে লাজুক ভঙ্গিতে বসেছিলো, তখনই আমার বুকের বা পাশে ছ্যাৎ করে উঠে।
এতো সুন্দরী একটা মেয়েকেই কিনা আমাকে আজীবন ভাবী বলে ডাকতে হয়?
যাক, আমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন যে মেয়েটাকে ভাবী না ডেকে জানু ডাকার সুযোগ পেয়ে গেলাম।
এইদিকে আমার পরিবারের লোকজন তো খুব চটে আছে মেয়েটার উপর। আমার বড়ভাইকে পছন্দ হয়নি ভালো কথা। কিন্তু যে ছেলে দেখতে গেছে তার ছোটভাই কে কিভাবে পছন্দ হয়? মেয়েটার কি লজ্জা শরম বলতে কিছুই নেই?
পরিবারই বা কি শিক্ষা দিয়েছে মেয়েটাকে?
আমাকে পরিবার থেকে সরাসরি বলে দেওয়া হয়েছে, ওই মেয়ের সাথে আমি যেন কোনোরকমের যোগাযোগ না রাখি।
এরকম নির্লজ্জ মেয়েকে কখনোই তারা বউ হিসেবে মেনে নিবেনা।

আমিও পরিবারের সবাইকে বলে দিছি, ‘ছিঃ ছিঃ আপনারা কিভাবে ভাবলেন যে এরকম একটা ফালতু মেয়ের সাথে যোগাযোগ রাখবো?
আমি তার দেবর হওয়ার কথা, আর সে কিনা আমাকে পছন্দ করেছে’
পরিবারের সবাইতো ভিষণ খুশি।
যা হইছে ভালোই হইছে।
এরকম একটা নির্লজ্জ মেয়ে ঘরের বউ হয়ে আসলে এই পরিবারের মান সম্মান বলে কিছু থাকতোনা।
আমি কিন্তু গোপনে ঠিকই মেয়েটা মানে জাকিয়ার সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছি।
নিয়মিত রেস্টুরেন্টে দেখা করছি।
সেলফি তুলছি, রিকশায় ঘুরছি, পার্কে বসে গল্প করছি, মোবাইলে কথা বলছি।
দিব্যি কাটছে আমাদের দিন গুলো।
কিন্তু বারোটা বাজতেছে আমার ম্যানিব্যাগের।
এইদিকে জাকিয়া বিয়ের জন্য জোরাজুরি করা শুরু করলো।
কিভাবে যে কি করবো সেটাই বুঝতে পারছিনা।
এখনো বড় ভাইয়ার জন্য মেয়ে পছন্দ করে উঠতে পারেনি আমার পরিবার।
এরমধ্যে যদি আমার বিয়ের কথা বলি?
তাও আবার আমার পরিবারের চোখে নির্লজ্জ মেয়ে জাকিয়াকে, অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সহজেই অনুমান করা যায়।
পালানো ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছিনা।
জাকিয়াও আমার সাথে পালাতে রাজি। জাকিয়ার কথা হচ্ছে, ‘যেভাবেই হোক, আমি শুধু তোমাকেই চাই আশিক।
আর কিচ্ছু আমার চাইনা।
কিন্তু পালাতে হলে আমাদের কিছু টাকা লাগবেই।
সেইদিকে খেয়াল রেখো।’
জাকিয়ার কথায় চিন্তায় পড়ে গেলাম।
এই সময় এখন টাকা পাবো কোথায়? এমনিতে এই এক মাসে জাকিয়ার সাথে ঘুরে অনেক টাকা নষ্ট করে ফেলেছি।
হঠাৎ মাথায় চলে আসলো ভাইয়ার বিয়ের সময় মেয়েকে দেওয়ার জন্য বানিয়ে রাখা গহনা গুলোর কথা।
ব্যস, অতি সতর্কতার সাথে গহনা গুলো চুরি করে ওই রাতেই আমি আর জাকিয়া পালিয়ে যাই।
কিন্তু কোথায় যাবো?
সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।
জাকিয়াকে বললাম চলো একটা হোটেলে থাকি আজকের রাতটা। জাকিয়া রাজি হলোনা।
এতো রাতে অবিবাহিত আমরা দুজন হোটেলে গেলে নাকি ঝামেলা হতে পারে।
জাকিয়ার নাকি একটা বন্ধু আছে।
যে বাসায় এখন একাই আছে।
তার বাবা মা গ্রামে বেড়াতে গেছে। আজকের রাতটা ওখানে কাটিয়ে সকালেই আমরা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে নিব।
তারপর অন্য কোনো ব্যবস্থা করা যাবে।
আমি ভাবছিলাম জাকিয়ার বন্ধু হয়তো কোনো মেয়ে।
এখন দেখি জাকিয়ার বন্ধু একটা ছেলে।
বেশ হ্যান্ডসাম ও স্মার্ট।
যাইহোক, আমি আর জাকিয়ার বন্ধু শুইলাম এক রুমে, আর জাকিয়া শুইলো আরেক রুমে।
জাকিয়ার বন্ধুর ঘুম চলে আসলেও আমার একটুও ঘুম আসছেনা।
এতো সুন্দরী একটা মেয়ে সকাল হলেই আমার বউ হতে যাচ্ছে, ভাবতেই কেমন শিহরন লাগছে।
হঠাৎ করে জাকিয়ার বন্ধু চোখ খুলে ঠাট্টা করে বললো, ‘কাল তো বিয়ে করছেনই।
এখন একটু ঘুমানতো’
আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম।
আর চোখ বন্ধ করলাম।
সারাদিন অনেক দখল গেছে।
সত্যি একটু ঘুমানো দরকার।
ঘুম ভেঙে দেখি সকাল হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম। কিন্তু এ কি?
বালিশের পাশে রাখা মোবাইল টা পাচ্ছি না।
খাটের পাশে রাখা ব্যাগটা নেই।
জাকিয়ার বন্ধু কেও দেখতে পাচ্ছি না।
জাকিয়ার রুমে গিয়ে দেখি জাকিয়াও নেই।
জাকিয়ার খাটে দেখি একটা সাদা কাগজ কি সব লেখা।
হাতে নিয়ে পড়তে লাগলাম।
‘তুমি মানুষটা ভিষণ ভালো।
তোমার প্রতি আমরা দুজনে কৃতজ্ঞ সারাজীবনের জন্য।
তোমাকে মন থেকে হাজারবার ধন্যবাদ।
তোমাকে দেখতেই কেমন ইনোচেন্ট লাগে।
তাই তোমাকেই আমি টার্গেট করি।
আমাকে দেখতে আসা সম্বন্ধ ভাঙ্গা।
আমাদের বিয়ের জন্য টাকা জোগাড় করা সব তোমার জন্যই সম্ভব হয়েছে।
কোনো একদিন তোমাকে এক বেলা খাওয়ার জন্য দাওয়াত করবো।
মন খারাপ করোনা লক্ষিটি’
কাগজ টা পড়ার পর মনে পড়ে গেল এক ভন্ড বাবার কথা।
মাঝে মাঝে ভন্ডদের কথাও সত্যি হয়।
ভন্ড বাবা বলেছিলেন, ‘সুন্দরীদের কখনো বিশ্বাস করতে নেই!’