নিয়তির খেলা (Part-3 )
নিয়তির খেলা (Part-3 )
– যদি আমার কাছে জানতে চান তাহলে আমি বলব,এই ধরনের মানুষের সাথে দ্বিতীয় বার আর দেখা না হওয়াটাই ভাল।এরা আবার যখন আসে তখনও কোন না কোন স্বার্থের খুঁজেই আসে।

– আমার মাথাটা আবার কেমন যানি ঘুরছে।আমাকে বাসায় নিয়ে চালুন,,,,
সেখান থেকে নিনিতাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।নিনিতা অসুস্থ থাকায় দুইদিন আর অফিস যাইনি আমি।
আজ নিনিতা একটু সুস্থ থাকায় আজকে অফিসে এসেছি।বিকেলে অফিস থেকে বের হবো এমন সময় বাড়ি থেকে ফোন আসলো বাবা অসুস্থ আমাকে বাড়ি যেতে হবে।আর মা বলল বিয়েটা তো তুই একা একাই করেছিস।আমরা এখনো তোর বউ কে দেখিনি।আসার সময় বৌমা’কে সাথে করে নিয়ে আসিস।
কিন্তু এই অবস্থায় ওকে কীভাবে সেখানে নিয়ে যাবো এটা নিয়ে আমি কিছুটা চিন্তায় পরে গেলাম।
– মা ফোন দিয়ে বলল বাবা অসুস্থ আমি আজকে রাতে বাড়িতে যাব তো আপনি কি আমার সাথে আমাদের গ্রামের বাড়ী যাবেন ?
– এই শরীরে কি এতো দূর জার্নি করাটা ঠিক হবে ?
– আমি আপনাকে যাওয়ার জন্য জোর করবো না।আপনার যেতে ইচ্ছে হলে আমার সাথে যেতে পারেন।
আমি তাকে আর কিছু বললাম না,আর মনে হয় বলার অধিকার ও নাই।আমিও চাই সুস্থ ভাবেই বাচ্চা টা হয়ে যাক।
রাত 11 টার বাসে যাবো তাই ব্যাগটা গুছিয়ে নিলাম ঠিক তখনেই নিনিতা এসে বলল,,,
– আপনি কি রাতেই চলে যাবেন ?
– হ্যাঁ,রাত 11 টার বাসে যাবো।
– বাসে কেন ? নিজের গাড়ী রেখে।
– এভাবে বউ ছাড়া গাড়ী নিয়ে গেলে খারাপ দেখাবে, তাছাড়া আমি সাধারণ ভাবে থাকতে বেশি পছন্দ করি, অনেক দিন ধরে এই শহরের জগতে নিজেকে আঁটকে রেখেছি।এখন গ্রামে গিয়ে মুক্ত বাতাসে একটু মুক্ত হতে চাই।
রাত সারে নয়টার দিকে নিনিতার বাবা ফোন দিয়ে বলল,,,,
– নিনিতা বলছে যে, তুমি নাকি আজকে রাতে গ্রামের বাড়ী চলে যাচ্ছ ?
– জি হ্যাঁ,,
– নিনিতাকেও নিয়ে যাও।তোমার মা আমাকে ফোন করেছিলো।
– আপনার মেয়ে তো অসুস্থ তাই আমি ভাবলাম ও সুস্থ হোক তারপর না হয় ওকে নিয়ে যাবো।
– কিছু হবে না, তোমরা এসি বাসে যাও। আমি কালকে গাড়ী পাঠিয়ে দিবো,বাসে ঝাকি লাগবে না।
– আপনার মেয়ে যেতে রাজী থাকলে আমার কোন সমস্যা নাই।
ফোন রাখতেই নিনিতা আমার কাছে এসে বলল আচ্ছা আপনার গ্রামের বাড়িতে কি কি দিয়ে যাওয়া যায়।
– বিমান ছাড়া সব কিছু দিয়েই যাওয়া যায়।
– ট্রেন দিয়ে যাওয়া যায় ?
– হম, যাওয়া যায়।
– আমি ছোট বেলায় একবার ট্রেনে উঠেছিলাম এর পর আর কখনো ট্রেনে উঠিনাই।আমি ট্রেন দিয়ে যাবো।
আমি রাতের ট্রেনের একটা কেভিন ভাড়া করলাম।রাত ১১ টায় আমারা ট্রেনে উঠলাম তারপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ট্রেন ছেড়ে দিলো।
– আচ্ছা আপনি এতো তাড়াতাড়ি ট্রেনের টিকিট পেলেন কীভাবে ?
– আপনি ট্রেনে যেতে চেয়েছেন।কিন্তু ট্রেনের কোন সিট খালি ছিল না। তাই 1200 টাকার এই কেভিন 4000 হাজার টাকায় নিয়েছি।
– শুধু শুধু এতগুলো টাকা কেন খরচ করতে গেলেন।আমরা না হয় বাসেই চলে যেতাম।
– আপনি বলেছেন ট্রেনে যাবেন 4000 টাকার জায়গায় যদি 4 লাখ টাকাও লাগতো তাহলেও আমি আজকে আপনাকে নিয়ে ট্রেনেই যেতাম।
আমার কথা শুনে নিনিতা আর কিছু বলল না শুধু আমার দিকে কিছুটা সময় তাকিয়ে ছিল।
– আমি একটু ওয়াশ রুমে যাবো।আপনি কি আমাকে ওয়াশ রুম পযন্ত দিয়ে আসবেন ?
– হম অবশ্যই।চলেন,,,
– ওয়াশ রুমে যাওয়ার আগে নিনিতা ওর ফোনটা আমার কাছে রেখে যায়।এই প্রথম আমি ওর ফোন হাতে নিলাম।
ফোন হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।এর মধ্যে ফোনে একটা কল আসলো।চিন্তায় পরে গেলাম এত রাতে ওকে কে ফোন করল,,,যাইহোক আমি ফোন রিসিভ করলাম না।নিনিতা বের হতেই ওর হাতে ফোন দিয়ে বললাম দেখেন তো কে যানি আপনারে ফোন দিচ্ছে।
– ফোন রিসিভ করলেই পারতেন।
– আপনার ফোন, আমি কেন ধরবো,,,
নিনিতা ফোন বের করে কথা বলল, তারপর বলল, আপনার ফোন বন্ধ কেন ? বাবা বার বার ফোন দিচ্ছিল আপনাকে।
– হ্যাঁ তাই তো।আপনার বাবা আমাকে অনেক বার ফোন দিয়েছে।
– আমি এর আগে একা কোথাও যায় নি, মানে বাবাকে ছাড়া।স্কুল বা কলেজে গেলেও আমাকে বাবা একা পাঠাতো না,আজ এতো দূরে যাচ্ছি তাও এই শরীরে তাই বাবা একটু চিন্তা করছে।
– না ঠিক আছে।বাবার সাথে দেখা করে খুব তাড়াতাড়িই আমরা ঢাকায় ফিরে আসবো।
– আমার না খুব খুদা লেগেছে।আসার সময় বাসা থেকে কিছু খাবার নিয়ে এসেছিলাম।
– তাহলে সেগুলো খান।
– আপনি কিছু খাবেন না ?
– না
– চলেন দুজনে একসাথে খাই।
– ওকে,,,
– আচ্ছা আপনার কি ছোট বেলার কথা মনে পরে ?
– মনে পরবে না কেন।জীবনের সবচেয়ে ভাল সময়টা যে তখন কাটিয়েছি।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মাদ্রাসায় চলে যেতাম তারপর সেখান থেকে এসে স্কুলে যেতাম।স্কুল থেকে এসে সবাই একসঙ্গে পুকুরে গোছল করতাম।পুকুরে সাঁতার কাটতে কাটতে চোখ লাল হয়ে যেত।তারপর মা হাতে একটা লাঠি নিয়ে এসে মারের ভয় দেখিয়ে পুকুর থেকে তুলে নিয়ে যেত।দুপুরে খাওয়ার পর মা ঘুমাতে বলত।আমিও গিয়ে বিছানায় শুতাম যখনেই দেখতাম মা ঘরে নেই উঠে এক দৌড়ে মাঠে চলে যেতাম খেলতে।তারপর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতাম।মা তখন বকাবকি করে পড়তে বসাতো।কিছুক্ষণ পড়ার পরেই ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসতো।মায়ের ধমক শুনে চোখ খোলে আবার পড়তাম।একটু পরেই আবার চোখ বন্ধ হয়ে যেত।তারপর মা বুঝে যেত আজ আর পড়াশোনা হবে না।তখন রাতের খাবার খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দিত।আর আমিও ঘুমের দেশে চলে যেতাম।
এভাবেই আমার শৈশব কেটেছে।তারপর যখন আস্তে আস্তে বড় হয়ে ক্লাস এইট এ উঠলাম তখনি এক মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলাম।
– ছোটকালের প্রেম,খুব ইন্টারেস্টিং তো,তারপর কি হল,,,
– মেয়েটা শহর থেকে এসে গ্রামে আমাদের স্কুলে ভর্তি হল।ওকে দেখে আমার খুব ভাল লেগে যায়।তারপর আর কি পরে গেলাম ওর প্রেমে পরে।যে আমি সপ্তাহে ছয় দিনের মধ্যে তিন দিন স্কুলে যেতাম সেই আমি তখন নিয়মিত স্কুলে যেতাম মেয়েটাকে দেখার জন্য আর এদিকে আমার মা কি খুশি এখন আর আমাকে জোর করে স্কুলে পাঠাতে হয় না।কিন্তু “মা” তো আর আমার ভেতরের খবরটা জানতো না।আমি যে এখন কেন প্রত্যেক দিনেই স্কুলে যায়।
– তারপর কি হল,,,,
– তারপর আর কি দেখতে দেখতে চলে গেল দুই বছর।এস এস সি পরীক্ষা শেষ হতেই মেয়েটা চলে গেল শহরে।মেয়েটাকে আর কিছু বলা হল না।
– আহারে,,,,আগে বলে দিলেই পারতেন।
– তখন কি আর এত কিছু বুঝাতাম নাকি।ওকে দূর থেকে দেখতাম তাতেই ভালো লাগতো।
– তাহলে এটাই কি ছিল আপনার প্রথম প্রেম ?
– প্রেম আর হল কই।কিছুই তো বলতে পারিনি মেয়েটাকে।
এর পরেও আরও একটা মেয়েকে আমার ভাল লেগেছিল।
– আবার,,,,
– হম
– তো সেটার কি হল,,,,
– গ্রাম থেকে এস এস সি দেওয়ার পর তখন আমি শহরের একটা কলেজে ভর্তি হয়েছি।বাড়ি থেকে যেতে আসতে বেশি সময় লাগতো তাই কলেজের কাছেই একটা বাসা ভাড়া নিলাম থাকার জন্য।
প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার সময় আমার সাথে একটা মেয়েও কলেজে যেত।আবার কলেজ থেকে আসার সময় ঐ মেয়েটা আমার সাথেই আসতো।
এভাবে কয়েক দিন যাওয়ার পর হটাৎ একদিন সাহস করে,,,,,
চলবে,,,,,