বয়সে ছোট হোক বা বড় Vut নামটা শোনা মাত্রই আমাদের মনের মধ্যে একটা আলাদা শিহরন বা ভয়ের সৃষ্টি। অথচ মনের মধ্যে শত ভয় থাকা সত্ত্বেও আমরা Bangla Bhuter Golpo শুনতে ছাড়তাম না। ছোট বেলায় যেমন দাদু কিংবা ঠাকুমার কাছ থেকে আমরা নানা ধরনের Vuter Golpo শুনতাম। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় আমরা সবাই কাজের মধ্যে এত ব্যাস্ত হয়ে গিয়েছি যে কারো কাছে গল্প শোনানোর সময় হয়ে ওঠেনা।
তাই আজকে আমার আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি একটি সত্যি কারের ভূতের গল্প। গল্প টিকে ৮ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তারই দ্বিতীয় ভাগটি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। আরও Bangla Sad Valobashar Golpo এবং Bengali Jokes পড়ার জন্য আমাদের ব্লগ টিকে সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথে থাকুন, আশাকরি গল্পটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এবং বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন।
Bengali Bhuter Golpo Online Reading | একটি সত্যি ভূতের গল্প
আজকের গল্প - অন্ধকার রাত্রি
পর্ব - দ্বিতীয়
কলেজে রায় সাহেবকে সবাই চেনে গম্ভীর ধরনের মানুষ হিসেবে। যারা অঙ্ক শেখায় তারা খানিকটা গন্তীর প্রকৃতির এমিতেই হয়ে থাকে। রায় সাহেব তাদের চেয়েও একটু বেশি গম্ভীর। যেদিন একটা ক্লাস থাকে তিনি ক্লাস নিয়ে বাড়ি চলে আসেন। যেদিন দুটো কিংবা তিনটে ক্লাস থাকে সেদিন ক্লাসের মাঝখানের সময়ে শিক্ষকদের কমন রুমে বসে খবরের কাগজ পড়েন। শিক্ষকদের গল্প গুজব হৈচৈ এ কখনো অংশ নেন না। তাঁর ভালো লাগে না।
আজ একটু ব্যতিক্রম দেখালেন। কমনরুমে রায় সাহেব যথারীতি খবরেব কাগজ পড়ছিলেন, তার পাশে বসেছেন বাংলার শিক্ষক শামসুদ্দিন আহমেদ। তিনি গল্প করছিলেন ঠিক তাঁর মুখোমুখি বসা লজিকের শিক্ষক সুজন বাবুর সঙ্গে। তাঁরা দুজনই খুব বন্ধু মানুষ। তবে রোজই কোনো একটা তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে তুমুল তর্ক বেঁধে যায়। একেকটা তর্ক শেষ পর্যন্ত রাগারগি হাতাহাতির পর্যায়েও যায়। প্রিন্সিপাল সাহেব তাদের দুজনকে কাছাকাছি বসতে নিষেধ করে দিয়েছেন। তারপরেও তাঁরা সামনাসামনি বসেন, সহজভাবে গল্প শুরু করেন, আরম্ভ হয় তর্ক, তর্ক থেকে গালাগালি।
তাঁদের আজকের গল্পের বিষয় হলো, নাম রাখা। শামসুদ্দিন সাহেবের স্বভাব হলো যে-কোনো গল্পই করা হোক না কেন তাকে টেনে টুনে রবীন্দ্রনাথে নিয়ে যাওয়া। সুজন বাবুর দিন দশেক আগে একটি মেয়ে হয়েছে, তার নাম এখনো ঠিক করা হয় নি। এই প্রসঙ্গে শামসুদ্দিন সাহেব বললেন, নাম রেখে দিন মীনাক্ষী। রবীন্দ্রনাথের খুব পছন্দের নাম।
সুজন বাবু বললেন, মীনাক্ষীর অর্থটা কী?
মীনের মতো অক্ষি, অর্থাৎ মাছের মতো চোখ।
আমার মেয়ের চোখ তো মাছের মতো না। দিব্যি মানুষের মতো চোখ। তার নাম মীনাক্ষী রাখব কেন? মানুষাক্ষী বরং রাখার একটা যুক্তি আছে।
>রবীন্দ্রনাথের খুবই পছন্দের নাম। তিনি বুদ্ধদেব বসুর মেয়ের নাম রেখেছিলেন মীনাক্ষী।
শামসুদ্দিন সাহেব চোখ লাল করে বললেন, বোয়াল মাছের মতো চোখ–এটা বলার অর্থ কী?
বোয়াল মাছের মতো না হলে অন্য কোনো মাছের মতো, রুই মাছের মতো কিংবা পুটি মাছের মতো। রবীন্দ্রনাথের মতো মানুষ নিশ্চয়ই কোনো একটা মাছের চোখের সাথে নাম মিলিয়ে নাম রাখেন নি। হেলাফেলা করে নাম রাখার মানুষ তিনি না।
তর্ক প্ৰায় বেঁধে যাচ্ছে এই পর্যায়ে সবাইকে অবাক করে দিয়ে রায় সাহেব হঠাৎ বললেন, মানুষের নাম রাখার পদ্ধতির মধ্যে সমস্যা আছে। পদ্ধতিটা ত্রুটিপূর্ণ।
শামসুদ্দিন সাহেব অবাক হয়ে বললেন, ত্রুটিপূর্ণ মানে?
মানুষের নাম এমনটা রাখা যেতে পারে যা থেকে তার চরিত্র সম্পর্কে আমরা মোটামুটি একটা ধারণা পেয়ে যাই।
কী রকম?
যেমন ধরুন যারা বোকা, তাদের সবার নাম শুরু হবে বোকা দিয়ে; তবে নামের শেষে একটা সংখ্যা থাকবে, সে সংখ্যা থেকে সে কতটা বোকা সেই সম্পর্কে একটা তুলনামূলক ধারণা পাওয়া যাবে। যত বোকা, সংখ্যার মান তত বেশি।
সুজন বাবু বললেন, যে একই সঙ্গে বোকা এবং জ্ঞানী, তার বেলা কী হবে? অনেক জ্ঞানী বোকাও তো সমাজে আছে। ওদের সংখ্যাই বরং বেশি।
একটা পদ্ধতি তাদের বেলাতেও বের করতে হবে। যেমন ধরুন বোকা ৭০, জ্ঞানী ৪০, অর্থাৎ সে যতটা না জ্ঞানী তারচে বেশি বোকা।
শামসুদ্দিন সাহেব হা হয়ে গেলেন। এরকম অদ্ভুত কথা তিনি এর আগে শোনেন নি। সুজন বাবু বললেন, এতে নাম অনেক বড় হয়ে যাবে না?
সংক্ষেপ করার পদ্ধতি বের করা যাবে। যেমন ধরুন বোকা ৭০, জ্ঞানী 8০ এটাকে সংক্ষেপে বলা যাবে বোজ্ঞা ৭০-৪০, বোকার বো, আর জ্ঞানীর জ্ঞা নিয়ে বোজ্ঞা, ৭০ এবং ৪০ এর মাঝখানে থাকছে একটা হাইফেন। বুঝতে পারছেন?
পারছি।
শামসুদ্দিন এবং সুজন বাবু দুজনই পুরোপুরি হকচকিয়ে গেলেন। সুজন বাবু বললেন, রায় সাহেব আপনি কি সম্প্রতি এই নিয়ে গবেষণা করছেন?
রায় সাহেব জবাব দিতে পারলেন না। ক্লাসের ঘণ্টা পড়ে গেছে, তিনি ক্লাসে চলে গেলেন। ক্লাস শেষ করে কমনরুমে ফিরলেন না, বাসার দিকে চলে গেলেন। কমনরুমে ফিরে এলে জানতেন যে এই এক ঘণ্টায় তাঁর নতুন নামকরণ করা হয়েছে–মিঃ বোজ্ঞা ৭০-৪০।
রায় সাহেব আজ আবার ছোট বোনের বাসায় গেলেন। মিলি তাকে দেখে প্ৰায় চেঁচিয়ে বলল, তোমার কী হয়েছে দাদা?
রায় সাহেব বিরক্ত গলায় বললেন, হবে। আবার কী! কিছু হয় নি তো।
তৃণা বলছিল, একটা ভূত নাকি তোমার কাছে আসে। জার্মান ভাষায় তোমার সঙ্গে গল্প করে।
আরে না। ব্যাপারটা স্বপ্ন।
এইসব আজেবাজে স্বপ্নই বা তুমি দেখবে কেন?
স্বপ্নের উপর কি কারো হাত আছে? আমি যে স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছা করব সেই স্বপ্ন দেখব–তা তো কখনো হয় না।
দাদা আমার কিন্তু খুব খারাপ লাগছে। তুমি একা একা থাক, এই জন্যে এসব হচ্ছে। তুমি তোমার বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আমার এখানে এসে থাক। আমি তোমার ঘর আলাদা করে দেব। তৃণাকে বলে দেব যেন কখনো তোমাকে বিরক্ত না করে।
আহা যন্ত্রণা করিস না তো। সামান্য স্বপ্ন নিয়ে …
তোমার মুখও তো কেমন শুকনো শুকনো লাগছে।
রায় সাহেব খুবই বিরক্ত হলেন। কঠিন গলায় বললেন, মুখের আবার শুকনো ভেজা কী? মুখ কি তোয়ালে যে শুকনো থাকবে। আবার ভেজা থাকবে।
মিলি বলল, দাদা শোন, বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে তুমি আরেকটু ভাবো। তোমার পায়ে পড়ি দাদা। প্লিজ। তোমার জন্যে যে মহিলার কথা আমি ভেবে রেখেছি তিনি অসাধারণ একজন মহিলা। খুব অল্প বয়সে তার স্বামী মারা গিয়েছিল, তিনি আর বিয়ে করেন নি। তুমি যেমন নিঃসঙ্গ তিনিও নিঃসঙ্গ। তাছাড়া বাহান্ন কোনো বয়সই না। পিকাসো ৮২ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন।
আমি কি পিকাসো? আমাকে কখনো ছবি আঁকতে দেখেছিস? এই নিয়ে আর একটা কথা না।
রায় সাহেবের একটিই বোন। বোনের ভালোবাসা তার কাছে অত্যাচারের মতো লাগে। এ কারণেই তিনি মিলিদের বাড়িতে কম আসেন। এটা তাকে বলাও যায় না। বললে মনে কষ্ট পান।
দাদা, রাতে কী খাবে?
রাতে কিছু খাব না।
এটা তুমি কী বললে দাদা, তোমাকে আমি না খাইয়ে রাতে ছেড়ে দেব? ঐ দিন এলে, আমি ছিলাম না। বিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলাম। এত সুন্দর একটা মেয়ে বান্দরের মতো একটা ছেলেকে বিয়ে করেছে। কথাও বলে বান্দরের মতো কিচকিচ করে। আবার প্রত্যেকটা শব্দের সঙ্গে একটা চন্দ্ৰবিন্দু লাগায়। মনে হয় নাকে প্রবলেম আছে। আমাকে দেখে বলল, পিসি ভাঁলো আছেন?… .তুই আমাকে চিনিস না জানিস না, আমার সঙ্গে তোর এত কীসের কথা?
রায় সাহেব বড়ই বিরক্ত হচ্ছেন। মিলি একবার কথা শুরু করলে থামে না। ছেলেমেয়েরা মাকে দেখে শেখে, তৃণা মার স্বভাব পাচ্ছে এটা অত্যন্ত আশঙ্কার কথা। তবে মিলির স্বামী রাজু কথা একেবারেই বলে না। তার বাক্যালাপ হ্যাঁ আর নায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এটা আশার কথা। সবাই কথা বললে এ বাড়িতে আসাই সমস্যা হতো। রাজু ডাক্তার। এম আর সি পি। হাসপাতালের বাইরেও তার এমন কাজ যে সে ঠিকমতো নিঃশ্বাস নিতে পারে না। বাড়িতে সে বিশ্রাম করতে আসে বলেই বোধহয় কথাবার্তা বলে অকারণ পরিশ্রম করে না। সারাক্ষণ ঝিম ধরে থাকে।
>
রাতে রায় সাহেবকে খেয়ে যেতে হলো। মিলি শখ করে রেধেছে। সাধারণ খাওয়া না। পোলাও কোর্মা। পোলাও হয়েছে শক্ত চাল চাল। কোর্মা লবণের জন্যে মুখে দেয়া যাচ্ছে না। এত আগ্রহ করে রেধেছে, কিছু বলা যাচ্ছে না। শুধু রাজু মুখ শুকনো করে বলল, আবার তুমি রেধেছো? রান্নার জন্যে বাবুর্চি তো আছে। নিজে রাঁধতে গেলে কেন?
মিলি বিরক্ত মুখে বলল, দাদা এসেছে আমি রাধব না তো কি পাড়ার লোকে এসে রেঁধে দিয়ে যাবে? বাবুর্চির রান্না আমি দাদাকে খাওয়াব? তোমার খেতে ইচ্ছে না হলে খেয়ো না। আমি তো তোমার পায়ে ধরে সাধি নি যে খেতেই হবে। খেতে কি খারাপ হয়েছে?
রাজু বলল, খেতে ভালোই হয়েছে। তবে পোলাও মুখে নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে চাবাতে হয়। এতক্ষণ চাবানোর ধৈর্য থাকে না।
মিলি স্বামীর দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজেকে সামলে নিল। ভাইয়ের পাতে পোলাও তুলে দিতে দিতে বলল, দাদা যে ভূতটা তোমার কাছে আসে তার নাম কী?
রায় সাহেব মনের ভুলে বলে ফেললেন, ওর নাম লেখক ৭8।
ভূতের প্রসঙ্গটা তিনি আনতে চাচ্ছিলেন না। তারপরেও এসে গেল।
মিলি কিছু বলার আগেই রাজু বলল, ভূতের কী নাম বললেন?
লেখক ৭8।
এটা কী ধরনের নাম?
ভূত সমাজের নাম রাখার এই ধারা। আমরা এই ধারার সঙ্গে পরিচিত নই বলে আমাদের কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে। ওদের কাছেও ঠিক এমনিভাবে আমাদের নামগুলিও খুব হাস্যকর লাগে।
মিলি বলল, হাস্যকর নাম তো আমাদের আছেই। আমার এক বান্ধবী তার ছেলের নাম রেখেছে গুলকি। আমি বললাম কীরে এত নাম থাকতে গুলকি নাম রাখলি কেন? সে কিছু বলে না, শুধু হাসে।
রাজু একবার বিরক্ত দৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে তাকাল। যে দৃষ্টির অর্থ হলো–চুপ কর তো, সব কিছুতে কথা বলবে না। মিলি সেই দৃষ্টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বলল, আমাদের পাশের বাড়ির কাজের মেয়েটার নাম কী জানো দাদা? তার নাম টুনটুনি।
>
রাজু বলল, একটু চুপ করবে? দাদার সঙ্গে একটা জরুরি কথা বলছি। মিলি বলল, আমিও জরুরি কথাই বলছি। আমার কথাগুলি কম জরুরি না।
তোমার জরুরি কথাগুলি একটু পরে বলো, আমারটা শেষ করে নিই। তুমিতো একবার কথা শুরু করলে শেষ করতে পার না। নদীর স্রোতের মতো চলতেই থাকো।
রাজু রায় সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল, দাদা আপনার এই ভূতের ব্যাপারটা ঠিক কী বলুন তো। আমি ভাসাভাসা ভাবে শুনলাম। সত্যি কি কিছু দেখেছেন?
বুঝতে পারছি না, মনে হয় স্বপ্ন।
রোজই দেখছেন?
পরপর দুরাত দেখলাম। মনে হয় আজও আবার দেখব।
আজ রাতে একটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমুবেন। যাবার সময় আমার কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে যাবেন। বিছানায় যাবার আধা ঘণ্টা আগে খাবেন। ওষুধ খাবার পর ঠাণ্ডা এক গ্লাস জল খাবেন। রোজ রোজ ভূত দেখা কোনো কাজের কথা না। শেষ পর্যন্ত একটা মানসিক সমস্যা হয়ে যাবে। শুরুতেই সাবধান হওয়া ভালো।
>
মিলি বলল, তুমিও তো দেখছি কথা শেষ করতে পারছো না। বকবক করেই যাচ্ছ।
আর করব না। এখন তুমি শুরু করতে পার।
মিলি বলল, দাদা তুমি আমাকে ভূতের ব্যাপারটা ভালোমতো বলো তো।
রায় সাহেব বললেন, ভালোমতো বলার কিছু নেই। দুঃস্বপ্ন। আর কিছু না।

0 Comments