পাশে বসে অনেক্ষণ থেকে
পাশে বসে অনেক্ষণ থেকে
জানালার পাশে বসে অনেক্ষণ থেকে বৃষ্টি দেখছে সঞ্জু। মন কাড়ানো বৃষ্টির শব্দ বারবার যেন নতুন স্বপ্ন দেখায়। বৃষ্টির তালে তালে কোথায় যে হারিয়ে যায় বুঝতে পারে না। মনে প্রেম জেগে ওঠে প্রকৃতির প্রতি! গান গাইতে ইচ্ছা করে তার! ভাবে -আহা! এমন দিনে গান গাইতে কার না ভালো লাগে! তাই গিটার টা নিয়ে আবার বসে পরে জানালার পাশে!


কি গান গাইবে ভাবতে থাকে! অনেক্ষণ ভাবার পরও কোনো গান মাথায় আসছিল না। একটু বিরক্ত হয়েই গিটারে হাত বোলাতে লাগলো। হঠাৎ Em কর্ডটায় রিদম দিতেই মাথায় একটা গানের কথা চলে আসলো তার। গানটি এর আগেও অনেকবার গেয়েছে সে! তাহসানের সেই গানটি – “তুমি ছুয়ে দিলে এ মন”
.
গিটারের তালে তালে গানটি গাইতে থাকে সঞ্জু!
.
“তুমি ছুয়ে দিলে এ মন, আমি উড়বো আজীবন! ………………………………………
……………………………………!! ”

গান গাওয়া হলে সঞ্জুর চোখে মুখে একটা প্রশান্তির চিহ্ন ফুটে ওঠে। কেন জানি এই গানটি তার খুব ভালো লাগে! তবে আজ একটু বেশিই ভালো লেগেছে গানটা গেয়ে। কারন এই গানটার প্রতিটা কথা আর সুর আজকের দিনটার সাথে একেবারেই মিলে গেছে। আসলে এসব প্রেমের গান বৃষ্টির দিনই ভালো লাগে। মনে হয় যেন এই দিনগুলোর জন্যই এই গানটি তৈরী হয়েছে। প্রশান্তি ঘন মনে গিটার টা যথাস্থানে রেখে পড়তে বসে সঞ্জু।
.
পরের দিন সকালে কলেজে যাবার জন্য রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলো সঞ্জু। এমন সময় পেছন থেকে একটা সুরেলা মেয়ে কণ্ঠ
.
– এইযে শুনছেন! !!
.
শুনে থমকে দাড়ায় সঞ্জু! পেছন ফিরে দেখে মিতু! মিতু হলো সঞ্জুর একবছরের জুনিয়র! ওদের বাসার পাশের বাসাটাতেই থাকে! ওর বাবা সঞ্জুদের কলেজের গণিতের শিক্ষক! ওর বাবাকে খুব শ্রদ্ধা করে সঞ্জু। এর আগে অনেকবার গিয়েছিল সঞ্জু ওদের বাসায় ওর বাবার কাছে। সেই সুবাদে সে মিতু কে চেনে! বয়সে ও ক্লাসে ছোট বলে সঞ্জু মিতুকে তুমি করেই ডাকে। সঞ্জুও সাড়া দেয়।
.- জ্বী বলো মিতু!
.
– আপনি কিন্তু অনেক ভালো গান করেন!
.
কথাটা শুনে একটু টেনশনে পড়ে যায় সঞ্জু। কারন আজ পর্যন্ত সে কারো সামনে গান করে নি। কিন্তু এই মায়্যা জানলো ক্যামনে যে সঞ্জুর গান রোগ আছে!!! তাই কি বলবে বুঝতে না পেরে বলে
.
– মানে?
.
-মানে আপনার গানের গলা অনেক সুন্দর!
.
সঞ্জু ভাবে – এইরে! খাইছি তো ধরা! ইতস্ততঃ ভাবে বলে –
.
– তুমি কি করে জানলে যে আমার গানের গলা সুন্দর? আমি তো কোনোদিনও তোমার সামনে গান করি নি। আর আমি তো গান পারিই না!
.
মিতু – (মুখ ভেংচিয়ে) ইহহহহহহ! ! বললেই হলো? আপনি কাল যখন বৃষ্টির সময় গান করছিলেন তখন আমি বৃষ্টিতে আটকে আপনার ঐ জানালার পাশেই দাড়িয়ে ছিলাম। আর আপনি তখন গান করলেন! আমি সব শুনেছি। আর জানালা দিয়ে দেখেছিও ! আপনি গিটারের দিকে চোখ করে গান করছিলেন! তাই হয়তো আমাকে দেখতে পাননি!” – এক নিঃশ্বাসে সবটুকু বলে তবেই শ্বাস ছাড়ে মিতু।
.
ধরা খাওয়া চোরের মতো চুপসে যায় সঞ্জু। তোতলিয়ে বলে
.
– ও এএএকটু আধটু পাপাপারি আর কি!. তো??
.
– তো আর কি! আপনি এখন থেকে আমাকে প্রতিদিন গান শোনাবেন।
.
– কেন? আমি তোমাকে প্রতিদিন গান শোনাতে যাবো কেন??
.
– না হলে বাবাকে বলে আপনার গণিতের খাতায় জিরো করে নেব!
.
– মানে কি? মমমমগের মুল্লুক নানানাকি??
.
– না না! তা হতে যাবে কেন? তবে আমি যা বলি বাবা তাই করে! এটা হয়তো আপনি যানেন। ওকে থাক শোনাতে হবে না! আর আপনি গণিতে জিরো পেলে আমার কিছু করার নেই!
.
বলে চলে যেতে ধরে মিতু।
.
গণিতে জিরো! ! কথাটা ভাবতেই কেমন জানি লাগে সঞ্জুর! আর এই মেয়ে যা পাগল টাইপের! যা খুশি তাই করতে পারে। বাদ্ধ হয়ে রাজি হয় সঞ্জু। মিতুর দিকে ছুটতে –
.
– দাড়াও! আমি রাজি।
.
একটা দুষ্টামি হাসি দিয়ে ফিরে তাকায় মিতু। বলে
.
– এই তো গুড বয়।
.
এর পর থেকে প্রতিদিন বিকেলে কলেজের বট গাছটার নিচে বসে সঞ্জু মিতুকে গান শোনাতো ! ধীরে ধীরে সঞ্জু মিতুর প্রতি দূর্বল হয়ে পরে। মিতুও তার কথায়, কাজে সঞ্জুর প্রতি দূর্বলতা প্রকাশ করে! এভাবে কিছুদিন চলার পর একদিন বিকেলে –
.
মিতু- (সঞ্জুর চোখের দিকে তাকিয়ে) তোমার চোখ গুলো অনেক সুন্দর!
.
হঠাৎ মিতুর মুখ থেকে তুমি করে শুনে চমকে ওঠে সঞ্জু।
.
– (মিতুর চোখের দিকে তাকিয়! ) তাই?? কিন্তু তোমার চোখের যে তুলনা হয় না! !
.
এই প্রথম সঞ্জু মুখ থেকে নিজের সুনাম শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যায় মিতু। তার ফর্সা গাল দুটো ক্রমেই লাল হয়ে যায়।
.
মিতু- তাই তবে আগে বলো নি কেন?
.
সঞ্জু- (কিছুটা দুষ্টামির স্বরে ) তাহলে তুমি কেন আগে আমায় তুমি করে বলো নি???
.
সঞ্জুর কথা শুনে মিতু সঞ্জুর চোখের দিকে তাকায়। সঞ্জুও মিতুর চোখের দিকে! এভাবে কতক্ষন যে চলে গেল. ঠিক নেই! হঠাৎ সঞ্জুর দৃষ্টিভ্রম হলো মিতু চিমটি কাটাতে।
.
-উফফ! কি হয়েছে??(সঞ্জু)
.
– অভাবে কি দেখছো? (মিতু)
.
– তোমাকে! অনেক সুন্দর তুমি!! আমি তোমাকে ভালোবাসি!
.
কথাটা শুনে মিতুর বুক ছেয়ে গেল আনন্দের জোয়ারে!! আনন্দে উল্লাসিত হয়ে সঞ্জুর দিকে তাকিয়ে-
.
– সত্যি???
.
– হ্যাঁ সত্যি!! কি ভালোবাসবে আমায়? থাকবে এই মনের ঘরে??
.
– হ্যাঁ!! থাকবো!!! আমিও তোমায় খুব ভালোবাসি!!
.
সঞ্জু এবার তার প্রিয় গানটি গিটারে তোলে! আজকের এই গিটারের শব্দে মিশে আছে তার পাওয়ার সকল আনন্দ! মিশে আছে মিতুর প্রতি তার ভালোবাসা ! গিটারের প্রতিটা তার আজ যেন এক নতুন সুরের সৃষ্টি করেছে! আর তার গলায়ও। সঞ্জু গাইতে থাকে –
.
আমি ডানা ছাড়া পাখি তোমার আশায় আশায় থাকি!
আমি পটে আকা ছবি প্রেম তুমি, ভালোবাসা সব-ই!!
তুমি ছুয়ে দিলে এ মন , আমি উড়বো আজীবন