নুসরাত তার রুমে বসে-nusrat tar rume bose
নুসরাত তার রুমে বসে-nusrat tar rume bose
#নুসরা তার রুমে বসে কাপড়চোপড় গুছাচ্ছে আর নুসরাতের
ছোট ভাই শুভ চুপিচুপি নুসরাতের পিছনে গিয়ে দাড়ালো।


– আপু ১০টা টাকা দে তো।
– কেন?
– স্কুল যামু।
– টাকা নাই এখন যা।
– এমন করস কেন আপু দে না প্লিজ।
– বলছি না, নাই এখন ঘ্যানর ঘ্যানর করিস
না তো।
– আপু দিবি কিনা?
( ঠাস)
– এই নে দিলাম, হইছে এখন?
– উহুঁ উহুঁ।
.

কাদতেঁ কাদতেঁ বেরিয়ে গেল ঘর থেকে শুভ।
এই হলো নুসরাত আর ওর ভাই। নুসরাত পরে ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে আর শুভ পরে ক্লাস ফাইভে। শুভ সবসময় ওর আপুর সাথে মেলামেশার চেষ্টা করে কিন্তু ওর আপু ওর সাথে এমন ব্যবহার করে। দুজনে সাপ বেজির মতো,, শুভ ওর আপুর কাছে থাকতে চাইলেও ওর আপু ওকে ঝামেলা মনে করে দূরে রাখে।
.
স্কুলে যাওয়ার সময়, শুভ ভাবলো আপু তো আমার স্কুলের সামনে দিয়েই কলেজে
যায়। আমার স্কুলের সামনে দিয়েই কলেজে যাওয়ার রাস্তা, তাই আমি আপুর সাথে যাব। শুভ ওর আপুর ঘরে গিয়ে দেখে ওর আপু রেডি হয়ে গেছে কলেজে যাবার
জন্য।
.
– আপু আপু আমাকে সঙ্গে নিয়ে যা।
– একা যেতে পারিস না।
– এতো গাড়ির মধ্যে একা যেতে ভয়
লাগে তোর সাথে যাব।
– আচ্ছা নিয়ে যাব, রাস্তায় বেরিয়ে এটা ওটা বাহানা ধরবি তো,
সকালের মতো আরেক টা দিব।
– আচ্ছা চুপ করে থাকবো।
.
তারপর শুভ আর নুসরাত বেরিয়ে পড়ে।
দুজনে চুপচাপ রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। তবুও ওদের মাঝে প্রায় ১ হাত ফাকা জায়গা বিরাজ করছে। শুভর অনেক ইচ্ছে করছে আপুর হাত টা ধরে রাস্তায় চলতে কিন্তু শুভ ১ হাত ফাক দিয়ে যাচ্ছে। আর আপুর কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে, যদি মাইর দেয়।
.
ওর আপু তো ওকে একটুও ভালবাসে না।
সবসময় মারধোর করে। তাই এখন শুভর মনে সবসময় এক ভয় কাজ করে,,, সেটা হলো আপুর কাছে যাওয়া যাবে না, নয়তো মার খেতে হবে। তখন শুভ বলে,,,
– আপু একটু কোলে নে না।
– কিইইইই?? ( চোখ বড় বড় করে রাগি লুক
নিয়ে তাকালো শুভর দিকে)
– না,,, কিছু বলি নাই।
.
শুভ ভয় পেয়ে আরও একটু দূরে সড়ে যায়।
তারপর শুভ ওর স্কুলে চলে যায় আর ওর আপু
একটু শান্তি পায়। মনে মনে বলতে থাকে আপদ গেছে।
.
এরপর সারাদিন শুভ স্কুলে আর নুসরাত কলেজে কাটায়। এভাবেই দিন চলছে দুজনের। শুভ পাচ্ছে শুধু ওর আপুর অবহেলা। কোনো সময় একটু ভালবেসে আদর করেনি ওকে। সবসময় বকাঝকা আর মেরেই সময় কাটায় বাড়িতে ওর আপু।
.
বিকেল ৪ টার ছুটি হয় শুভর স্কুল। ওর বাসার আশেপাশে ওর কোনো বন্ধু নেই। তাই স্কুল ছুটি হওয়ার পর শুভ একা একা মেইন রোডের ধার দিয়ে ধীরে ধীরে হাটতে হাটতে বাসার দিকে অগ্রসর হয়। রাস্তায় দিয়ে যাওয়ার সময় শুভ দেখে একটা মেয়ে একটা ছেলেকে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। ছেলেটি মেয়েটার কোলে ছিলো, বিশেষ করে মেয়েটার ছোট ভাই হবে হয়তো।
.
রাস্তা পাড় হওয়ার পরই দুজনে আবার একসাথে চলতে লাগলো। শুভ তখন ভাবে, ইসসসস এমন করে যদি আমার আপু আমাকে আদর করতো ভালবাসতো তাহলে ও অনেক সুখী হতো। আর কিছু চাইতো না ওর আপুর কাছে। এটুকুই যথেষ্ট ছিলো শুভর কাছে। কিন্তু এটা নুসরাত বুঝতো না, যে ওর ভাই কি চায়। শুভ শুধু ওর কাছে একটু আদর চায় কিন্তু নুসরাত শুভকে অবহেলা ছাড়া কোনো দিন কিছু দেয়নি। এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসে শুভ। আর ওর আপু তো আগেই এসেছে,, কারণ স্কুল থেকে কলেজ আগে ছুটি হয়। এসে ফ্রেস হয়ে দেখে আম্মু বাসায় নেই।
.
-আপু আম্মু কই গেছে?
– পাশের বাসায়।
– খেতে দে।
– আমার কাজ আছে, ভাত বেড়ে খা।
– ধ্যাত, ভাল্লাগেনা,, কোনো কিছু
করতেই বললেই সবসময় বলস তুই নিজে কর।
এমন করস কেন আপু?
– উফফফ, কি করি এটাকে নিয়ে!! আচ্ছা বস দিচ্ছি।
-( শুভ খুশি মনে তাড়াতাড়ি বসে পড়লো)
– এই নে খা।
– আপু তুই খেয়েছিস?
– তোর সেটা নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না,, চুপচাপ খা।
– ( শুভ মুখ কালো করে খাওয়া শুরু করলো)
.
কিছুক্ষণ পর নুসরাত ওর ঘরে চলে গেল আর শুভ ভাতের প্লেট হাতে নিয়ে আবার নুসরাতের পেছন পেছন চললো। ঘরে গিয়ে,,
– আপু তুই মনে হয় খাসনি,, এই ধর হা কর আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
(এ কান্ড দেখে নুসরাত খুব রেগে গেল)
-ওই হারামি তোরে কে এতো দরদ দেখাতে বলছে হ্যাঁ,
যা ভাগ এখান থেকে।
.
এরকম ভাবে বলার জন্য শুভর চোখটা ছলছল করে উঠলো জলে,,, শুভ মন খারাপ করে চলে গেল ঘর থেকে। অর্ধেক প্লেট ভাত খেয়ে আর বাকিটুকু না খেয়েই নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো শুভ।
বাচ্চা পোলাপাইন। এখনো ভালবাসা শব্দের অর্থ জানে না। তবুও আজ খুব কষ্ট হচ্ছে ওর, কেন ওর আপু ওকে একটুও আদর করে না। একটুও ভালবাসে না? খুব কান্না পাচ্ছে শুভর। তাই আজ শুভ শুয়ে শুয়ে নীরবে কেদে যাচ্ছে। সে কাঁন্না ওর আপুর কানে যাচ্ছে না। নুসরাত শুনতে পাচ্ছে না ওর ছোট্ট ভাইয়ের কষ্ট মাখা কান্না। হয়তো কোনো দিন শুনতেও পাবে না।
.
তারপরের দিন বিকেলে শুভ স্কুল থেকে এসে তাড়াহুড়ো করে ওর আপুর কাছে গেল,
– আপু আপু বড়ই খাবি? দ্যাখ কি মিষ্টি!!!!
– কই পাইছস?
– আমাদের স্কুলের সামনে মেইন রোডের ধারে
যে বড় বড়ই গাছ ওটা থেকে পেড়েছি।
– গাছে উঠতে পারিস?
– হ্যাঁ, পারি।
– আচ্ছা রেখে যা।
.
তারপর শুভ বড় বড় কয়েক টা বড়ই ওর আপুর বিছানায় রেখে খুশি মনে ফুটবল নিয়ে বাইরে খেলতে গেল। খুশি হওয়ার কারণ টা হলো : আজ ওর আপু ওর উপর না রাগ করে ও যেগুলো দিছে সেগুলো রেখে দিছে তাই শুভ আজ অনেক খুশি।
শুভ কতখন ফুটবল নিয়ে গড়াগড়ি করেআবার মন খারাপ করে বাসায় চলে আসলো। এবার মন খারাপ হলো গিয়ে,,, ওর এখানে কোনো খেলার সাথী নেই। শুভ একা একদম একা। কেউ নেই এখন শুভর পাশে। কিছুক্ষণ পর ভাবলো,, আমি তো আজ আপুকে খুশি দেখেছি,, বড়ই দিছি বলে। আপু খুব খুশি হইছে তাই আপুকে বলি আমার সাথে খেলতে।
.
ঘরে গিয়ে শুভ দেখে ওর আপু রিমোট নিয়ে টিভি দেখছে,,
– আপু শোন।
– কি?
– আমার সাথে বাইরে চল না একটু।
– ক্যা?
-ফুটবল খেলবো।
– তো খেল। আমি কি করবো?
– তুই তো জানিস এখানে তুই ছাড়া আমার খেলার সাথী
আর কেউ নেই,, চল না আপু একটু খেলি।
– চুপ করে ঘরে গিয়ে বসে থাক যা এখান থেকে। যত্তোসব।
.
শুভ চলে গেল সেখান থেকে। আর নুসরাত টিভি দেখতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর শুভ দেখে ওর আপু বাথরুমে গেল। তাই দৌড়ে আপুর ঘরে গিয়ে আপুর গোপাল ভাঁড়ের হাসির বইটা নিয়ে নিজের ঘরে চলে এলো শুভ। তার কিছুক্ষণ পরেই শুভ ওর আপুর চিল্লাচিল্লি শুনতে পেল।
– শুভ এই শুভ।
– কি হইছে আপু? ( অনেক ভয় নিয়ে বললো)
– আমার ঘরে ঢুকেছিলি?
– হ্যাঁ, আপু।
– বই কে নিছে?
– আমি।
– নিছস কেন?
– একা ভালো লাগছে না, তাই পড়ার জন্য নিএছি।
– ( ঠাস)
– আরেক বার যদি তুই আমার ঘরে আমার অনুমতি ছাড়া
ঢুকেছিস তো তোর পা কেঁটে ফেলবো।
– আচ্ছা আপু আর যাব না কোনো দিন (কেদে দিয়ে বললো শুভ)
– যা এখন। আর ভুলেও কোনো দিন আমার জিনিসের ভেতর
হাত দিবি না। নইলে ফল খারাপ হইবো।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
.
এই বলে দৌড়ে চলে গিয়ে নিজের ঘরে এসে খুব জোরে জোরে কাদতেঁ লাগলো শুভ। এ কান্না শুনেও ওর প্রতি একটুও মায়া জন্মালো না ওর আপুর। কাছে এসে একবারের জন্যও নুসরাত আদর করে বললো না, কাঁদিস না ভাই, আর মারবো না।
শুভর মা বাবা এগুলো সব দেখে, শুধু শুভর “মা ওর আপুকে মাঝেমধ্যে একটু এ বিষয় নিয়ে বকতো, কেন ও এমন করে শুভর সাথে কিন্তু এর বেশী কিছু বলতো না।
.
কি দোষ করেছিল শুভ। কোন পাপের শাস্তি দিচ্ছে আজ ওর আপু। কেন ওকে এতো কষ্ট দেয়। কোন অপরাধের শাস্তি দিচ্ছে। নুসরাত শুভ কে একটুও ভালবাসে না। একটুও আদর করে না। কিসের জন্য ছোট ভাইকে একটু কাছে টেনে নেয় না। সবসময় কেন এতো অবহেলা করে??
এভাবে চলছে দিন। কয়েক মাস পর ….
.
নুসরাত কলেজে গেছে আর শুভ স্কুলে গেছে। আজ বৃহস্পতিবার। হাফ টাইম। তাই শুভ ভাবছে আজ আসার সময় আপুর সাথে আসবে।
কলেজে প্রায় নুসরাতের সব বান্ধবীরা’ই জানে নুসরাত কেমন। ও ওর ভাইয়ের সাথে কেমন ব্যবহার করে। কলেজ ক্যান্টিনে বসে আছে নুসরাত, নীলা আর মায়া।
মায়াঃ– নুসরাত তুই তোর ভাইকে আমার কাছে দিয়ে দে।
নুসরাতঃ- কেন?
মায়াঃ- তোর ভাইটা অনেক কিউট,, খুব আদরকরতে ইচ্ছে করে
ওকে, কিন্তু তোর তো “শুভ” দু চোখের বিষ,, তাই বলছি ওকে
আমার কাছে দিয়ে দে…..
নীলঃ– ঠিকই বলছিস, নুসরাত তুই আর কষ্ট দিস না ওকে,,
না হয় আমাদের কাছে দিয়ে দে। অনেক হ্যাপি রাখবো।
মায়াঃ– তুই তো তোর ভাইকে একটুও ভালোবাসিস না।
তোর ভাইকে ভালবাসার ভার টা না হয় আমাদের দে….
নুসরাতঃ- কি বলছিস এসব??
নীলাঃ– ভুল কি বললাম রে? (নুসরাত)?
.
নুসরাত এখন বসে বসে একটা কথাই ভাবছে,,, চোখের বিষ। শুভ” কি সত্যিই আমার চোখের বিষ? যার জন্য ওকেএকটুও ভালবাসি না। সবসময় আমার পিছনে তো শুধু আমার কাছ থেকে একটু সময় পাওয়ার জন্য ঘুরঘুর করে। কিন্তু আমি মাইর দেই। এটা কি ঠিক হচ্ছে। আমি কি করছি এসব ওর সাথে??
এখন শুধু নুসরাতের বিবেক থেকে এই সব কথা আসছে। এতদিন যদি আমার শুভ কে না বকে না মেরে আদর করতাম, ভালবাসতাম , তাহলে তো ওর জীবনটাই পাল্টে যেত। আর একা থাকতে হতো না। ভালো একটা সঙ্গী পেতো ও। কিন্তু এ আমি কি করছি? ছিঃ। কোনো বোন তার ভাইয়ের সাথে এমন করতে পারে? আমি কি করে করলাম?
.
এসব ভাবতে ভাবতে কলেজে ছুটি হয়ে গেল। আজ নুসরাত একা একা হেঁটে বাড়ি আসছে। আর ভাবছে, ভাইটাকে আজ সাথে করে দুজন একসাথে বাসায় যাব। কলেজ গেটের বাইরে বেরুতেই এক ১০-বছরের বাচ্চা মেয়ে নুসরাতের হাত ধরলো,, মেয়েটার কাপড়চোপড় দেখে বোঝা গেল কোনো বস্তির হবে হয়তো।
.
– আফা আফা দশটা ট্যাহা দিবেন?
– কি করবি?
– আমার দু বছরের ছোট ভাইটা না কাল সন্ধ্যা বেলা থিকা
কিছু খাইয়া পারে নাই,, ঘরে কিচ্ছু নাই।
– তুই খাইছস?
– আফা আমার খাওয়ার দরকার নাই,, আমার ভাইয়ে
খাইলেই আমার খাওয়া হইয়া যাইবো।
এই পিচ্চি মেয়েটার এ কথা শুনে আজ। নুসরাতের চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে। ব্যাগ থেকে ১শ টাকার নোট বের করে সেই মেয়েটার হাতে দিল নুসরাত।
– আফা এতো ট্যাহা নাগবো না, মাত্র দশ ট্যাহা হইলেই
ভাইয়ের লিগা একটা রুটি কিনা পারুম।
– এতগুলোই নে, সমস্যা নাই, তুই আর তোর
ভাই হোটেলে গিয়ে আজ পেট ভরে খাবি।
– আচ্ছা আফা ঠিক আছে, যাই এহন।
.
এই বলে মেয়েটা খুশি হয়ে চলে গেল।
আর নুসরাত এক পা দু পা করে সামনে এগোচ্ছে। নুসরাতের পা চলতে চায় না এখন। খুব কান্না পাচ্ছে এখন নুসরাতের।
যে ভাই ওর পিছনে দশটা টাকার জন্য হাত পাচ্ছে ওর কাছে, সেই ভাইকে ও মেরে তাড়িয়ে দিছে। কিন্তু এই মেয়েটাকে দেখো, এতো পিচ্চি একটা মেয়ে, নিজে খাক বা না খাক, তা নিয়ে ওর কোনো খেয়াল নেই, ওর ছোট্ট ভাইটা যেন শুধু একটু খেতে পায় সেজন্য অন্যের কাছে হাত পাতছে।
আর আমি, আমার নিজের রক্তের ভাই, ওর সাথে কি ব্যবহারটাই না করছি। সবসময় খারাপ ব্যবহার আর অবহেলা করছি। জানি না ও কোনো দিন আমাকে ক্ষমা করবো কিনা তবুও আজ আমি প্রতিজ্ঞা করছি এরপর আর কোনো দিন আমার ভাইয়ের সাথে এমন করব না, খুব আদর করবো ওকে। অনেক ভালবাসবো।
.
এসব ভাবতে ভাবতে প্রাইমারী স্কুলের সামনে এসে পরে নুসরাত। এসেই দেখে স্কুলের সামনে মেইন রোডের পাশে বড়ই গাছের নিচে অনেক মানুষের ভীড়। আর ভেতর থেকে কার যেন কান্নার আওয়াজ আসছে। কি হলো আবার ওখানে। কত্তো ভীড়।
.
নুসরাত একজনকে ডাক দিল,,
– এইযে ভাই শুনুন।
– কি হইছে?
– ওখানে এতো ভীড় কিসের?
– আর বলবেন না, একটা বাচ্চা ছেলে স্কুল ছুটির পর
বড়ই গাছে উঠছিল বড়ই পারতে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত
ছেলেটা গাছ থেকে পরে যায়, পরছে তো পরছে একেবারে
পিচ ঢালা রোডের মাঝে। বাচ্চা ছেলে, আঘাত সয্য করবার
পারে নাই। ওখানেই মারা গেছে। আর কোথা থেকে যেন,
ওর মা আসে তারপর নিজের ছেলেকে জড়িয়ে ধরে
কান্না কাটি করতেছে।
– ওহ্,, আচ্ছা আপনি যান।
.
লোকটা চলে গেল। নুসরাত ভাবছে,
আবার কোন মার কপাল পুড়লো? এখনই মার কোল
খালি হয়ে গেল। ইসসসস, দেখতে হচ্ছে, বিষয় টা।
আস্তে আস্তে ভীড় ঠেলে ভেতরে যেতে লাগলো নুসরাত। একটু ভেতরে যেতেই দেখতে পেল, এক মহিলা বিপরীত মুখী হয়ে সেই ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার
করে কাঁদছে। লাল রক্তে ভিজে গেছে রাস্তার সাইড। রক্তের ঢল বয়ে গেছে ছেলেটার মাথা থেকে।
.
সেই অভাগা মা কে দেখার জন্য নুসরাত আরও সামনে যেতে থাকে। এতো অল্প বয়সে যে মার কোল খালি হয় তাকে তো একটু দেখতেই হবে তাই না!!!! অনেক কষ্টে ভীড় ঠেলে মহিলার সামনে যায় নুসরাত।
নুসরাত মাথা তুলে মহিলার দিকে তাকাতেই নুসরাতের মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। এটা কাকে দেখছে নুসরাত?? নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। যে মহিলাটা চিৎকার করে কাঁদছে সেটা আর কেউ না,,, স্বয়ং নুসরাতের মা। তবে কি ওনার কোলে ওই রক্ত মাখা ছেলেটা আমার ভাই?? না। আর ভাবতে পারছে না নুসরাত। চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে নুসরাতের। সেখানেই মাথা ঘুরে পরে যায় নুসরাত।
.
এক নিমিষেই সব শেষ হয়ে গেল। ৬ ঘন্টা পর নুসরাতের জ্ঞান ফিরে। জ্ঞান ফিরে নুসরাত দেখে সে তার বাড়ির সামনে পরে আছে, আশেপাশে অনেক মানুষ। নুসরাতের পাশে বসে আছে ওর মা, তিনি এক ভাবে কেদে চলছেন। আর নুসরাতের সামনে কাফনের কাপড় জড়ানো এক ছেলেকে শুইয়ে রাখা হইছে।
.
সামনে রাখা নাকে তুলো গুঁজে দেওয়া লাশটাকে জড়িয়ে ধরে একবিস্বাদ আত্ম-চিৎকারে ভেঙে পরে নুসরাত। আর নানা আবোল তাবোল বকতে থাকে #নুসরাত।
ওই ভাই উঠ, উঠ না ভাই। দ্যাখ তোর আপু এসেছে তোর কাছে। ওই ভাই আপু বলে ডাক না। প্লিজ ভাই। তোকে আর মারবো না রে ভাই, খুব আদর করবো এরপর। উঠ ভাই। এসব বলে আরও জোরে জোরে কাদতেঁ থাকে নুসরাত। তবুও আর শুভ উঠে না।
.
আজ শুভ শুনতে পাচ্ছে না ওর আপুর কান্নার আওয়াজ। কি করে শুনবে? ওর দেহে যে আর প্রাণটা নেই। একদিন শুভ ওর আপুর জন্য কাঁদছে কিন্তু ওর আপু শুনতে পায়নি। তবে আজ কেন শুভ ওর আপুর কান্না শুনতে পাবে? না ফেরার দেশ থেকে।
শুভ মরে গেছে আজ অনেক দিন হলো,,, এখন শুধু নুসরাত প্রতিদিন ওর ভাইয়ের স্কুল ব্যাগ টা জড়িয়ে ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলে। আর ভাবে,, ভাই রে তুই আমাকে ক্ষমা না করেই দূরে চলে গেলি। আমি যে, সারাজীবন তোর কাছে অপরাধী হয়ে থাকবো রে ভাই। কবে ফিরবি তুই আমার কাছে??
.
নুসরাত এখন প্রতিদিন বিকেলে অপেক্ষা করে ওর ভাইয়ের জন্য,, ওর ভাই কখন স্কুল থেকে ফিরে এসে বলবো, আপু খেতে দে! তারপর কখন শুভ ওর মুখের কাছে প্লেট নিয়ে বলবো _ আপু নে হা কর, আমি খাইয়ে দেই।
কিন্তু শুভ আর আসে না। নুসরাত গভীর আগ্রহ নিয়ে শুভর পথ চেয়ে বসে থাকে তবুও শুভ আসে না এখন কেউ নুসরাত কে বলে না – আপু চল না ফুটবল খেলি, তুই ছাড়া যে আমার কোনো সঙ্গী নেই। এখন কেউ বলে না – আপু তোর জন্য বড়ই আনছি, খাবি? দ্যাখ কি মিষ্টি!! এসব ভাবতেই #নুসরাত ঢুকরে কেঁদে উঠে। তবুও আজ ওর কান্না শুভর কানে পৌঁছায় না।
.
পৌছাবে কি করে? এখন যে শুভ, মাটির নিচে অনেক আরামে ঘুম পারছে।#নুসরাতের কান্নার আওয়াজে তো আর এ ঘুম ভাঙবে না।
Please Rate This Post